মোঃমাসুম বিল্লাহ, পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় তিল চাষে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। এবার তিল ক্ষেত থেকে শুধু তিলই নয়, মৌমাছির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে কৃত্তিম উভয় প্রাকৃতিক মধুও। এই অভিনব উদ্যোগে চাষিরা যেমন আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে।
এ বছর ভান্ডারিয়ার গৌরীপুর ইউনিয়নের ঘোষের হাওলায় প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে তিল চাষ করা হয়েছে। তিল ফুলে মৌমাছির আকর্ষণ তৈরি হওয়ায়, স্থানীয় কিছু উদ্যোক্তা ও চাষি মিলে ক্ষেতের পাশে মৌচাষের বক্স স্থাপন করেছেন। এতে মৌমাছিরা ফুল থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পরাগায়ন করছে এবং একইসঙ্গে উৎপাদিত হচ্ছে বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক মধু।
সরেজমিনে গিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দেখা গেল এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। যতদূর চোখ যায়, ততদূরই শুধু তিল ক্ষেতের সবুজ গালিচা। তিল গাছের ওপর সাদা ও হালকা গোলাপি রঙের ফুলে ভরে আছে পুরো মাঠ, আর তার মাঝে মৌমাছির গুনগুন ধ্বনি এক অনন্য প্রাকৃতিক সুর তৈরি করছে। প্রকৃতি ও কৃষির এই মিলন যেন নতুন করে ছুঁয়ে যাচ্ছে মানুষের হৃদয়।
এসময় ক্ষেত পরিচর্যার কাজ করছে কৃষক মো.আবুল হাওলাদার তাদের সাথে আলাপ কালে তারা জানান বেশ কয়েক বছর তারা পৃথক ভাবে কিছু জমিতে তিল চাষ করে। এ বছর উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরে পরামর্শ ও সহযোগীতায় স্থানীয় প্রায় ৫০-৬০ জন কৃষক একত্রিত হয়ে একটি প্রদর্শণী ব্লকের মাধ্যমে প্রায় ১’শ বিঘা জমিতে বারি-৪ জাতের তিল চাষ করে। আর এতে প্রতি বিঘায় চাষ, সার, বীজ সব মিলিয়ে ২হাজার তিনশত থেকে ২হাজার চারশত টাকা খরচ হয়েছে। সঠিক ভাবে তিল ঘরে তুলতে পারলে খরচ বাদে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা প্রতি বিঘায় লাভ থাকবে।
স্থানীয় তরুণ কৃষক মো.শাহিন জানান, “এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখিনি। মনে হয় যেন প্রকৃতিই সাজিয়েছে তিল ক্ষেতকে। প্রতিদিন বহু মানুষ এই দৃশ্য দেখতে আসছে। কেউ ছবি তুলছে, কেউ ভিডিও করছে।”
মো শাহজাহান জানান, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ার ফলে ক্ষেতগুলোতে গাছের গঠন ও ফুলের পরিমাণ তেমন ভাল হয়নি। তার পরেও মাঠজুড়ে ফুলের সৌন্দর্য আর মৌমাছির কর্মচাঞ্চল্য পুরো পরিবেশকে যেন উৎসবমুখর করে তুলেছে।
এদিকে তিল ক্ষেত থেকে মধু সংগহের জন্য বরগুনা জেলা থেক কিছু পেশাদার মৌচাষী কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইয়াছিন আরাফাত রানা নিজ উদ্যোগে নিয়ে এসছেন। পাঁচ জনের একটি দল তিল ক্ষেত দক্ষিণ পাশে সুইডেন প্রবাসী আরিফুল ইসলামের বাড়ির পাশের বাগানে ১শ ত্রিশটি মৌ মাছির বাক্স স্থাপন করেছে। তাতে থাকা মৌমাছি তিল ক্ষেত থেকে মধু আহরন করে চাকে সংগ্রহ করে। যা নির্ধারিত সময়ে ভাঙা হবে।
মৌ চাষী রানা জানাযায়, এখান থেকে দুই মাসে প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকার মধু উৎপাদন করতে পারবে।
ইউপি সদস্য জিয়া উদ্দিন জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইয়াছিন আরাফাত রানা’র একান্ত প্রচেষ্টায় এই প্রদর্শনী টি করা হয়েছে। তিল গাছের ফুলে মৌমাছির আনাগোনা প্রাকৃতিক মধু উৎপাদনের পাশাপাশি ফসলের ফলন বাড়াতেও সহায়ক হচ্ছে। আগামী বছর আমাদের লক্ষ মাত্রা আরো বৃদ্ধি করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, এই উদ্যোগ ভান্ডারিয়ার কৃষি খাতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিল চাষ যেমন লাভজনক, তেমনি মৌচাষও পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যকর। আমরা কৃষকদের এই পদ্ধতি আরও ছড়িয়ে দিতে চাই। এটি এখন একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অংশ হয়ে উঠেছে। আমরা চাই আগামী বছর এই চাষ আরও ছড়িয়ে পড়ুক।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইয়াছিন আরাফাত রানা জানান, সংমিলিত উদ্যোগে আমরা একদিকে তিল চাষ করছি, আর সেই একই ক্ষেতের পাশে বসানো মৌচাক থেকে সংগ্রহ করছি মধু। এটা আমাদের জন্য দ্বিগুণ লাভের সুযোগ এনে দিয়েছে। মৌচাষের মাধ্যমে প্রাকৃতিক মধু উৎপাদন এখন ভান্ডারিয়ার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এখন এই পদ্ধতিতে যুক্ত হতে চাইছেন। সংমিলিত উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ সরবরাহ করছি।