সম্পাদকীয়:
দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনরা। সরকার কে এই পদক্ষেপ নিতে হবে। ইউটিউব,ফেসবুক,পত্র-পত্রিকা খুললেই দেখা যায় আবারো উৎপাত বেড়েছে কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, ইয়াবা ব্যবসায়ী ইত্যাদি অপরাধ জনিত কর্মকাণ্ডের সদস্যদের। এসব ছোবল থেকে জনগণ এখনো পরিত্রাণ পায়নি। গত পাঁচ আগস্টের পর থেকে গতানুগতিক ভাবে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট জনরা। গত ৫ই আগস্ট'র আগে এই সমস্ত কিশোর গ্যাং,চাঁদাবাজ,লুটপাটকারী ছিলেন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা বড় ভাই, ছোট ভাইয়ের আন্ডারে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে গত পাঁচ আগস্ট এর পরে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র ও অবৈধ অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে শোডাউন দিতে দেখা যায় বিভিন্ন উপজেলা,জেলাশহর, বিভাগী শহর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রশাসনের নাকের ডগায় করে যাচ্ছে এই সমস্ত অপরাধ জনিত শোডাউন।
সম্প্রতি যমুনা টিভির এক ভিডিও প্রতিবেদনে, কুমিল্লা শহরের দুই কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের কুমিল্লা শহরে দেশীয় অস্ত্র হাতে আলাদা আলাদা এই মহড়া দিতে দেখা যায়। এই অবৈধ দেশীয় অস্ত্র সহকারে মহড়া দেখে জনগণের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। কুমিল্লা শহরের( সি বি কে) গ্রুপ ও (রতন) গ্রুপ এই উভয় গ্রুপই ভয়ংকর বলে জনমনে দাঁড়ানো রয়েছে। এরা প্রশাসনের সামনে সমস্ত অপরাধ সংঘটিত করে থাকে। সাধারণ জনগণ ও কুমিল্লা শহরের বিশিষ্ট জনের মতমতে উঠে আসে, প্রশাসনের নিরব ভূমিকা পালনের কথা।
অন্য দিকে চট্টগ্রামে গত ২৯ এপ্রিল সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রকে ক্লাস থেকে খেলাধুলা করার প্রলোভন দেখিয়ে চান্দগাও এর হামিদচর এলাকায় নিয়ে হত্যা করে লাশ গুমের ঘটনা ঘটে। এই সমস্ত কিশোর গ্যাং এর দাপট দিন দিন বেড়েই চলছে।
প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে এ সমস্ত কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের দমন করতে না পারলে ভবিষ্যতে দেশ আরো বিপদের দিকে নিমজ্জিত হতে পারে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়ালেখার মনোভাব ফিরিয়ে আনতে হবে। বিগত সরকারের আমলে এই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার চেয়ে রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার অপব্যবহারটাই ছিল বেশি। শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীদের এই সমস্ত অপরাধ থেকে দূরে রাখতে হবে। সহপার্টিদের মধ্যে আন্তরিকতা ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা শ্রদ্ধাবো জাগ্রত করতে হবে। এখনকার ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকদের সম্মান করতে ভুলেই গেছে। শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের শাসনের মাত্রা কমিয়ে নিয়েছে। যার কারণে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে সম্মানের স্থানটা আগের তুলনায় অনেক কম বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ সমস্ত দুর্দশা পণ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ছাত্র শিক্ষক সহপাঠীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তবেই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে রূপান্তরিত হবে।
যে শিক্ষার্থী হাতে কলম নিবে তার হাতে কেন অস্ত্র উঠবে? শিক্ষকের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সন্তানের খোঁজখবর রাখতে হবে। আমার সন্তান স্কুল-কলেজ, ভার্সিটিতে কি রকম বন্ধু-বান্ধবের সাথে চলাফেরা করছে তার প্রতি আমাদের সজাগ থাকতে হবে। শিক্ষকদের ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে কি রকম ব্যবহার করছেন সন্তানদের প্রতি সে দৃষ্টি রাখতে হবে। আদরের পাশাপাশি শাসনেও রাখতে হবে। আজকাল এই সমস্ত আদবের বড়ই অভাব। অভিভাবকের ভুল হচ্ছে সন্তানরা বড় হয়ে উঠলে আমরা তাদের সাথে মেলামেশা কম করি তাদের মনোভাব বুঝতে পারিনা। এভাবে হলে সন্তানরা বিপদগামী। তাই সব সময় সন্তানদের সাথে পিতা মাতার বন্ধুসুলভ আচরণ থাকতে হবে। তাহলে সন্তানরা অন্যায় পথে পা বাড়বে না।
সরকারের উচিত প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে বলা। যেখানে কোন অন্যায় দেখবে সেখানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। অবৈধ অস্ত্র হাতে কাউকে দেখলে তাকে ক্রসফায়ার দেয়ার অনুমতি দেয়া। সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের দ্রুত জামিন না দেওয়া। কিশোর গ্যাং এর সাথে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা। সরকারি আইন প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে অভিভাবকদেরকেও সতর্ক করা। সন্তানদের কিশোর গ্যাং এর ছত্র ছায়া থেকে দূরে রাখা। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাং এর সদস্য কারো আপনজন হতে পারে না। এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, সমাজের শত্রু। এমন আইন প্রণয়ন করা উচিত যাতে চিরতরে দেশ থেকে এ সমস্ত আগাছা নির্মূল হয়। দেশের সাধারণ জনগনের আশা এই দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ,মাদককারবারী,চোরাকারবারী,ইভটিজার,দুর্নীতিবাজসহ সকল ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দেশ ও সমাজকে রক্ষা করা। সঠিক আইন প্রণয়ন হলে দেশ থেকে অপরাধ নির্মূল হইবে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে এই প্রত্যাশায় জনগণের।
এম ইমরান বিন ইসলাম, সহ-সম্পাদক, দৈনিক যুগান্তর বাংলাদেশ।
তাং: ৩০/০৪/২৫ইং।