লেখক: নূরে আবরার রাজিন, যুব সংগঠক, জাতীয় নাগরিক পার্টি, চট্টগ্রাম জেলা।
ঠিক ১২ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৮-৯টার দিকে বাংলাদেশের মানুষ সাক্ষী হয় বিশ্বের ইতিহাসের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনার। একদিনেই ঝরে যায় নিরীহ ১১৩৪ জন শ্রমিকের প্রাণ, আহত হন ২০০০-এর বেশি মানুষ—সফলভাবে সম্পন্ন হয় রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ড।
রানা প্লাজা ছিল আট তলা একটি ভবন, যেখানে কয়েকটি পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক ও কিছু দোকান ছিল। ভবনটিতে ফাটল দেখা গেলেও মালিকপক্ষ জোরপূর্বক শ্রমিকদের প্রবেশ করান ও কাজ করতে বাধ্য করেন। ফলে সংগঠিত হয় একটি ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডি। মুহূর্তের মধ্যে আট তলার বিশাল ভবন পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে, আর সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে ভেসে আসে শ্রমিকের আর্তনাদ—"আম্মু, বাঁচাও!"
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একদিন পড়ে জানবে, কিভাবে কিছু মুনাফার আশায় পয়সাওয়ালারা শ্রমিক হত্যার একটি পৈশাচিক নাটক মঞ্চস্থ করেছিল।
এই ঘটনায় মোট ২০টি মামলা হয়, যার মধ্যে একটি হত্যা মামলা, একটি ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘনের মামলা এবং একটি দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা। কিন্তু ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারপ্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। মামলার ৩৮ জন আসামির মধ্যে কেবলমাত্র ভবন মালিক সোহেল রানাই গ্রেপ্তার আছেন—বাকিরা জামিনে মুক্ত।
এই হত্যাকাণ্ডে আহত অনেক শ্রমিক এখনো মানসিক ও শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। অনেকে পঙ্গুত্বের শিকার হয়ে কাজ হারিয়েছেন। অন্যদিকে নিহতদের পরিবার আজও সরকারি সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ যথাযথভাবে পাননি।
আজকের এই ২৪ এপ্রিল, আমি শুধু শোক প্রকাশ করতে চাই না—আমি চাই বিচার।
আমরা চাই:
▪️ রানা প্লাজার মালিক খুনি সোহেল রানার ফাঁসি।
▪️ ১২ বছরেও এই নেক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন না হওয়ার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় আনা।
▪️ জামিনে মুক্ত অপরাধীদের পুনরায় বিচারের মুখোমুখি করা।
▪️ সকল আহত ও নিহত শ্রমিক পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।
▪️শ্রমিকবান্ধব আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
গত ১৬ বছরে, ফ্যাসিবাদী সরকার শ্রমিকের জীবনের চেয়ে পুঁজিপতির মুনাফাকে বড় করে দেখেছে। স্বৈরাচার হাসিনা সরকার শ্রমিক মরলে কেবল লাশ গুনেছে, বিচার করেনি। এই ধারাবাহিকতা যেন আর কখনো না ফিরে আসে। স্বৈরাচারের পতনের পর এখনই সময় পরিবর্তনের।
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা আর্তনাদ আজও আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। যুব সমাজ, ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ—আমরা যদি এখনো নীরব থাকি, তবে এই অন্যায়ের ইতিহাস বারবার ফিরে আসবে।