মোঃ আজগার আলী, জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:
দ্রুত গাইড বাঁধ ও ব্লক দিয়ে ভাঙন রোধের দাবি জানালেও সংস্কারের উদ্যোগ না নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মাদার নদীর উপকূল রক্ষা বাঁধের একটি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীর তীরবর্তী কয়েক হাজার পরিবার প্লাবনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাঁধটি সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এটি নদীতে বিলীন হয়ে গেলে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
জানা গেছে, উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের ভেটখালী, টেংরাখালী, শেখবাড়ি, কালিঞ্চী, যতীন্দ্রনগর, গোলাখালী, পারশেখালী ও মীরগাং গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়কটির ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা না নিলে ওই এলাকার সুপেয় পানির একমাত্র উৎস শেখ বাড়ি দীঘি, শেখ বাড়ি জামে মসজিদ-মাদরাসাটি বিলীন হয়ে যেতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভেটখালী কোস্টগার্ড অফিসের সামনে থেকে টেংরাখালী স্লুইচ গেট পর্যন্ত সড়কের শেখবাড়ি এলাকার কয়েকটি অংশে ফাটল ধরেছে। বিশেষ করে সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আলমগীর হায়দারের বাড়ি সংলগ্ন সড়কটি মাদার নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভাঙনকবলিত অংশে জিও ব্যাগ ও জিও ফিলটার দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি এলাকাবাসী ‘ভাঙন ঠেকাও, রমজান নগরবাসীকে বাঁচাও’ স্লোগানে নদীর তীরে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নেন।
ভেটখালী শেখবাড়ি এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, এই নদীতে অনেকের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। অনেকে জায়গা-জমি হারিয়ে এখান থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। এখন চলাচলের একমাত্র সড়কটি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। না হলে আগামী বর্ষায় হয়ত সড়কটি নদীগর্ভে চলে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আল-আমিন বলেন, এখানে আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি। যেভাবে রাস্তা ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে, ব্লক দিয়ে দ্রুত মেরামত না করলে যেকোনো সময় আমাদের এলাকা নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লাল্টু জানান, এই সড়কটি রমজাননগর ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ থেকে ৭টি গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র পথ। সাবেক চেয়ারম্যান আলম শেখের বাড়ির সামনের অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সূত্রমতে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গত বছর পাকা রাস্তা নির্মাণ করে দিলেও নদীভাঙন রোধে গাইড বাঁধ নির্মাণ করেনি। তাই রাস্তার ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ভাঙন এলাকা সংস্কার না করে পাউবো ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে।
পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, রাস্তাটি এলজিইডির আওতাধীন, তাই সংস্কারের দায়িত্ব তাদের।
আর এলজিইডি বলছে, নদীভাঙনের কারণে সড়কটি ভেঙে গেছে। এটা পাউবোর বেড়িবাঁধ, তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব মাদার নদীর ওই অংশের পাইলিংয়ের কাজ করা। তাহলে সড়কটিকে রক্ষা করা যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের-১ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ভেটখালী পওর শাখা) প্রিন্স রেজা বলেন, রমজাননগরের ভেটখালী শেখবাড়িসহ কয়েকটি স্থানে নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে শুনেছি। আমরা ভাঙনকবলিত এলাকার খোঁজখবর নিয়ে সেখানে জিও ফিলটার স্থাপন করেছি। এছাড়াও বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এরইমধ্যে জানিয়েছি। তবে যেহেতু এ রাস্তাটি এলজিইডির, তাই সংস্কারের দায়িত্ব তাদের।
অপরদিকে এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, রমজাননগরের ভেটখালী শেখবাড়ি এলাকায় মাদার নদীর তীরের সড়কে ভাঙনের বিষয়ে আমাকে জানানো হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙনরোধের ব্যবস্থা করা যায় কি না দেখব। যদি না হয় তাহলে অন্য দপ্তরের সহযোগিতা চাওয়া হবে। এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ, তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব নদীর ওই অংশের পাইলিংয়ের কাজ করা। তাহলে সড়কটিকে রক্ষা করা যাবে।